Thursday, October 19, 2017

হ্যাঁ আমিও বাঁচতে চাই

Article Tag No. #31212
© Abiyad Ahmed 

(এক অসহায় মেয়ের জীবন কাহিনী অবলম্বনে)

"হ্যাঁ আমিও বাঁচতে চাই"
             - আবিয়াদ আহমেদ

রোজ বিকেলের মতই আজও বেরিয়েছি কলেজ থেকে, স্বাভাবিক জনঢেউ, ব্যস্ত সময়ের চাবুক খেয়ে ছুটছে যে যার মত। এক মুহূর্ত পলক ফেলার সময় সাহেব বাবুদের নেই, গরিব কাপড় তাদের কাছে অচ্যুত। বড় অট্টালিকায় বসে কফির পেয়ালায় চুমু দেয়, কত উঁচু থেকে শহরের প্রান্তর তারা দেখে, রেস্তোরায় অহেতুক কত টাকার বলিদান দেয় তবু তাদের ১০ টাকা একজন অসহায় চেয়ে বসলে তুই, তুকারির শেষ থাকেনা। ঠিক এমনই একটা গল্প, যতীনদাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের গেটে দাঁড়িয়ে বন্ধুর অপেক্ষা করছি, সামনে কয়েকটা বাচ্চা 'দাদা ২ টাকা দাও, দাদা আমাকেও দাও' রোজকার অভ্যাসে পাল্টে দিয়েছে। গল্পটা এখানে স্তব্ধ হয়ে যায়নি, বরং একটা বাঁচার যে লড়াই সেটা হয়তো শুরু হয়েছে মাত্র। 

কালো ছিমছিমে চেহারা, জীর্ন আকৃতির একটা মহিলা পাশের শিশু উদ্যানের দেয়াল ঘেঁষে বসে আছে, হাঁটু ভাঁজ করে, দেখলে কিছু মনে হবেনা তার শারীরিক বেদনা বা সমস্যার কথা। সেদিন ওই মেট্রোর গেটে ওই বাচ্চাটা প্রথম দেখেছিলাম, তাই আমিও সবার মতই ২ টাকার একটা কোয়েন দিয়েছিলাম। মিনিট খানেক বাদ, সাদা শার্ট গলায় টাই আর হাতে ব্লেজার পড়া এক ভদ্র লোক আসতেই, বাচ্চাটা গিয়ে ব্লেজার ধরে ১০ টাকা আবদার করে বসে। জানা ছিলোনা সেই ভদ্রলোক কখনও ক্ষুধার্থদের জ্বালা অনুভব করেছে কিনা, কিন্তু অমানবিক কতটা তার ব্যর্থ পরিহাস যা ঘটল সেটা অপ্রত্যাশিত! ব্লেজার হাত দিয়ে সম্ভোধন 'বাবু ১০ টাকা দাওনা, মা খাইনি সকাল থেকে' শেষ হলেই একটা ধাক্কা দিয়ে গর্জে উঠলো ইংরেজিতে 'Bloody', বাচ্চাটার কাছে আদৌ কী বলা মানে বোধগম্য হয়েছিল কিনা সৃষ্টির মালিক সেটা জানে। বাচ্চাটার করুন অবস্থা দেখে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ হেঁকে বলে ওই শোন এদিকে ১০ টাকা তুই কি করবি? বাচ্চার অবচেতন মনের জবাব 'মা সকাল থেকে খাইনি বাবু, মায়ের যে খুব জ্বর আর মা বলছে পেট দিয়ে যন্ত্রণা করে খুন বাহার হচ্ছে - ডাক্তার তো ১০০ টাকা নেবে, আমার সকাল থেকে ২৩ টাকা জমা হয়েছে' কথাটার ভঙ্গিমা যতটা কষ্ট দিলো, ততটাই বিবেকের জ্বলন্ত উদাহরণ দিলো। হাসি মুখেই বাচ্চাটা ওই বৃদ্ধের দেয়া ১০ টাকা মায়ের কাছে দিয়ে আবার গেটে এসে দাঁড়িয়েছে, মাঝপথে কত সাহেব-বিবিদের আনাগোনা, অথচ সেই বাচ্চার কাকুতিমিনুতি কেউর শ্রুতিগোচর হলোনা। কিছুক্ষনেই, ওই রমেশ বলে ডাক দিলো অসহায় মহিলা, ছুটে পালায় রমেশ, দেখলাম মায়ের পেট মাশাহ করে দিচ্ছে, শরীরে নেই জোঁ, জীর্ন দেহে, সকাল থেকে দু'মুঠো খাবার জোটেনি তাই ওই জননী ছটফট করছে - সহ্য না করতে পেরে আমি হাজরার মোড় থেকে একটা বিস্কুটের প্যাকেট কিনে আসতে যা সময় তাতে ওই ক্ষুদার্ত রমণী তার দ্বিতীয় সন্তানের জননী হয়ে গেছে, বাচ্চা রমেশ তো ওই যোনিদ্বার থেকে রক্ত জানতো না - মায়ের মুখে শোনা সেই পেট থেকে খুন বের হচ্ছে এটাই জানতো। গর্ভের চরমতম যন্ত্রণা নিয়ে সে ওই দেয়াল ঘেঁষে সন্তান কবে ভূমিষ্ট হবে তার অপেক্ষার মিনিট গুনছিল। 

ফুটফুটে একটা বাচ্চা সে আবার মেয়ে, রক্ত লাগা সারা দেহ, মায়ের মনে ওই রমেশের মায়ের সেই ছেঁড়া, পুরোনো শাড়ির আঁচল দিয়ে জড়ানো রয়েছে। ওই অবলা রমণী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিস্কুটের প্যাকেটটা ছিঁড়ে খেতে আরম্ভ করেছে, রমেশ মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে 'মা কাল সকাল হলেই আমাকে চায়ের দোকান যেতে হবে, এখন মা আমাকে রোজ ২০ টাকা আনতে হবে, এইটা বাচ্চা যে খাবে, আর বড় বাবুরা আমাকে তো ধাক্কা দেবে, তাই আমি কাজ করবো' বাচ্চাটা চলে গেলে, আমি একটা প্রশ্ন করি 'আপনার স্বামী জানে আপনার পেতে বাচ্চা ছিল সেকথা?' প্রতুত্তরে রমণী বলে 'ওই, জারুয়া (Black sheep of the society) আমাকে জোর করে করছে, আমার ওষুধ ছিলোনা বাপু, বাচ্চা নষ্ট করতে পারিনি', আহঃ কী কষ্টমুখর বিবৃতি পুরো অন্তরজুড়ে বহিয়ে দিলো। বাচ্চার মুখে দুধ তখনও পড়েনি, দুধটা দেবে কে? ওই রমণী? না সে কী করে দেবে? তার দাঁড়ানোর জোঁ নেই, বাচ্চার তো বেঁচে থাকার অধিকার আছে, চিৎকার করে কান্না দিয়েই চলেছে, জানাচ্ছে তোমরা আমাকে বাঁচাও, আমি তোমাকে রমেশের মতই সুখে রাখবো। ক্রমান্বয়ে, জীর্ন দেহ, উলট পালট শাড়ির গোঁজা দিয়েই রমেশের হাত ধরে কালীঘাটের দিয়ে রওয়ানা দিলো। 


সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষেরা উঁচু জায়গায় থাকতে থাকতে নিজেদের মানবিকতাকেও একটা অমানবিক করে তুলেছে যে করুণ মিনতিও তাদের হৃদয় ছুঁইয়ে দেয়না। তারা ওই মানুষ হয়েই জন্মে আসে, আর বিবেক ঘুঁচিয়ে ফিরে যায়। 


Don't copy without prior permission of Abiyad Ahmed (Admin). 

Thanks,
With Regard
Abiyad Ahmed.


For suggestion / complaint kindly use this link.