Article Tag No. 31220
© Abiyad Ahmed
নির্বাসন
© Abiyad Ahmed
নির্বাসন
খোলা
চোখে স্বপ্ন বাঁধে অতীত, যারা অসহায় – নিস্তব্ধ, এমনই এক ভালোলাগা দিনের চৌকাঠের ওপারে
ঘুড়ি উড়িয়েছিলাম আমি। বিপন্ন হাতের উষ্ণতায় কত কালো ধোঁয়া আমার প্রেমে পড়েছিল সেইদিন!
এহেন নির্মল আকাশের নীচে আবেগ এলো, মিষ্টি গানের সুরগুলো সেজে উঠেছিল অজানা গরিমায়
– তবু থেমে যায়নি আমার চেতনা। রাসবিহারী মোড়ে দাড়িয়ে থাকা ট্র্যাফিক সিগন্যালে, উম্মীলন
ঘটেছিল শারীনের, কিছু মুহূর্তের আবেগে দেখেছিলাম তাহার সরল মুখখানা, যেন কলার ভেলায়
এক রাজহংসী। বিনোদন ছিল, উগ্র-আবেগের চরম প্লাবতা ছিল, আমেজ ছিল প্রায় অন্যরকম – পাশের
টাক মাথার দাদুর লীলা বড্ড অট্টহাসির সম্মুখীন করেছিল তাকে, সেখানেই তার রোমাঞ্চের উৎকর্ষ সাধন হয়েছিল। জানা
ছিলনা যে রক্তমাখা হাতে চুলের বেনী খুললে নারীকুল বড় লোভনীয় হয়ে পড়ে, তারা অনাবিল আনন্দ
ভোগ করে, বুঝে ছিলাম সেদিন বন্ধ কাঁচের ভেতর অতৃপ্ত রোমাঞ্চকর সহিষ্ণুতার তাৎপর্যগুলো।
ব্যাস, আর বিলম্ব না করেই, গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়লাম, রোমহর্ষক করে তুলেছিল তার লম্বা
চুলের ঝাপটা, লাল রং-বেরঙ্গের এক ঝাঁক চুড়ি, নীল-সবুজ সালোয়ার পড়া উদাসীন দেহের সৌন্দর্যতা
এবং সেটা মুহূর্তেই আমার গহীনে বিশৃঙ্খল অরণ্যের আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কেমন একটা গর্জন
ছিল সেই দুপুরের, রূপোলী শ্রাবণ ভর করেছিল ঠাণ্ডা কাঁচের শার্সিতে। খুঁজে পায়নি সেদিন
চিঠির ডাকবাক্স, আধুনিকতার মোড়কে দু’চারটে ঠ্যালা-রিক্স আর বাদাম চাঙ্ক। তাপহীন রৌদ্র,
বিষম বৃষ্টি নিয়ে সেজে উঠা প্রেম উৎসব মেটে সিঁদুর মেখেছিল। হতভম্ভ হয়নি, আবেগ পিছু
ছাড়েনি আমার – তবু জনহীন প্রান্তরময় অস্পষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম ট্রামের ঘণ্টা থেকে
কন্ডাক্টর এর চিৎকার আমায় বধ করেনি। কীসের এই রূপকতা? ব্যস্ত বসন্তের মাঝে লেলিহান
দৃষ্টিপট থেকে হারিয়ে গেল এত আবেগ অচেনা শহরের বুকে। ইচ্ছে ছিল আলতা পায়ে হলুদ শাড়িতে
গোলাপের বিছানায় বসে গল্প করতে, পড়ন্ত বিকেলে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকি রোজ – বাইরের
বিপুল ঝড়ে তুমি ফিরতে পারবেনা বলে, খরচোখে তমার-আমার শুভদৃষ্টি হবে না বলে, তোমায় আমি
ছুঁতে পারবনা বলে। শুকনো নদীর জলে পা ডুবিয়েছিলাম, রূপোয় বাঁধানো আয়নায় খুঁজে ছিলাম
আবার একবার তোমায় – জলের সম্মুখ ছাড়া নারীকে মানায় না বলে। তাই অত্যন্ত মমতায় উপহার
প্রেরণ করেছিলাম, শারীনের হারিয়ে ফেলা ডাক ঠিকানায়। গদ্দ্যেছন্দে বহু প্রশ্নের জবাব
নপুংসতার মুখোমুখি হয়ে গন্ধরাজ ফুলের কুঁড়িতে, শিউলির বোঁটায়, সিগারেটে জমা শ্যাওলায়
নির্বাসিত হল। বাতাসে উড়ে বেড়ানো রূপোলী মানবী উৎসুক চোখে খোলা চিঠির অপেক্ষায় – লোভহীন
শরীরের নিবেদন চোখ বুজে হউক নির্বাসন।
বিঃদ্রঃ পাঠকবৃন্দের কাছে বিশেষ অনুরোধ আপনারা কোনও অংশ অনুমতি ব্যতিরেকে কোথাও ছাপিয়ে দেবেন না, স্বপ্রমান ধরা পড়লে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।